'বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম'
'আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহু'।
মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ মেহেরবানি যে, আমরা রাসুল(সা.) ঐশী প্রেমের বন্ধনে আবদ্ধ এবং তাঁর প্রদত্ত ঐশী বানীর প্রতি আনুগত্যশীল একটি মুসলিম জাতি। চরিত্রে উৎকর্ষ সাধনকারী মোহাম্মদী ইসলামের ঐশী শিক্ষায় আপনারা যে বিশ্বাস, ধৈর্য্য ও অবিচল আস্থা রাখতে পেরেছেন, তা আমাকে প্রতিনিয়ত অনুপ্রাণিত করে, আপনাদেরকে নিয়ে এগিয়ে চলার শক্তি যোগায়।
আমরা আজ যেহেতু নিজেদেরকে আশেকে রাসুল হিসেবে দাবি করছি , তাই অত্যন্ত কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি সুফি সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী(রহ.) হুজুর কেবলাজানকে, যিনি আমাদের এই আত্মিক উৎকর্ষ সাধনের পথ পরিক্রমায় অনবদ্য অবদান রেখেছেন। সুফিবাদের প্রচার ও প্রসারে সুফি সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী(রহ.) হুজুর কেবলাজানের আত্মত্যাগ, মোহাম্মদী ইসলাম সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানের পরিধিকে করেছে আরো সমৃদ্ধ এবং আমাদের হৃদয়কে করেছে ঐশী প্রেম ও প্রজ্ঞায় আলোকিত। তিনি তাঁর সুগভীর আধ্যাত্মিক জ্ঞানের মাধ্যমে অসংখ্য মুক্তিকামী মানুষকে মহান প্রভুর নৈকট্য অর্জনে এবং নবুওয়াতি শিক্ষায় আলোকিত হতে পথনির্দেশনা দিয়েছেন।
Leading Imam Prof. Dr. Qudrat E Khoda (Mza.)
এই নিত্য পরিবর্তনশীল বিশ্বে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা যে সকল প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছি, সেগুলো অত্যন্ত ব্যাপক ও জটিল। আমরা বর্তমান বিশ্বে যে বিভেদ, বিশৃঙ্খলা, ক্ষুধা, দারিদ্র্য, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য দেখছি, সেগুলো আমাদের বৈশ্বিক ঐক্য ও সংহতিকে আরো হুমকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। এই উদ্ভুত পরিস্থিতি রাসুল(সা.) এর প্রতি আমাদের ভক্তি ও বিশ্বাসের ভিতকে নাড়িয়ে দিচ্ছে , কারণ আমাদের প্রাণাধিক প্রিয় রাসুল হযরত মুহাম্মদ( সা.) এর সুমহান শিক্ষার মাধ্যমেই আমরা শান্তি,মুক্তি ও কল্যাণের শ্বাশত দিকনির্দেশনা পেয়ে থাকি।
বলার অপেক্ষা রাখে না, মোহাম্মদী ইসলামের মূল শিক্ষা নিহিত রয়েছে এর সার্বজনীনতার মধ্যে। এই শাশ্বত শিক্ষা কোনো ভৌগোলিক, সাংস্কৃতিক ও জাতিগত সীমারেখা দ্বারা সীমাবদ্ধ নয়। হজরত রাসুল(সা.) জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের জন্য রহমত স্বরুপ প্রেরিত হয়েছিলেন, এবং তাঁর শিক্ষাগুলো বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তের মানুষের জন্য সময়োপযোগী ও বাস্তবসম্মত।
মোহাম্মদী ইসলামের অনুসারী হিসেবে, সাম্য, মৈত্রী, ন্যায়বিচার, সার্বজনীন শান্তি ও সম্প্রীতির নৈতিক শিক্ষাগুলো সমুন্নত রাখা আমাদের একান্ত কর্তব্য । বিভিন্ন ধর্ম, জাতি ও ভাষাগোষ্ঠীর মানুষের সাথে পারষ্পরিক সহবস্থান ও সহমর্মি আচরণের মাধ্যমে আমরা দয়া ও সহনশীলতার প্রতিমূর্তিতে পরিনত হওয়ার চেষ্টা করবো। আমাদের সকল কর্মের মাধ্যমে যেন হযরত রাসুল(সা.) এর শিক্ষা প্রতিফলিত হয় এবং অন্ধকারাচ্ছন্ন এই বিশ্বে শান্তি ও মুক্তিকামী মানুষের জন্য বাতিঘর হিসেবে কাজ করে।
মানবসভ্যতার সূচনা থেকে শান্তি ও প্রগতির মূল ভিত্তি ছিলো শিক্ষা ও জ্ঞান।আসুন, আমরা মোহাম্মদী ইসলামের অনুসারী হিসেবে, জ্ঞান অন্বেষণ ও ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে সবার জন্য এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করি। আসুন আমরা আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হই; বৈজ্ঞানিক গবেষণালব্ধ জ্ঞান অর্জন করে আমরা আলোকিত মানুষে পরিনত হই, কারণ এই জ্ঞান অর্জন শুধু আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, অধিকন্তু, ব্যাক্তি অথবা একটি জাতি হিসেবে আমাদের অগ্রগতির জন্য অত্যাবশ্যক।
আমি আপনাদেরকে বিনীত আহবান করছি, আসুন, আপনারা মোহাম্মাদী ইসলাম সম্পর্কে আপনাদের জানার পরিধিকে আরো সমৃদ্ধ করুন। পবিত্র কোরআন ও হাদিস থেকে গভীর জ্ঞান অর্জন করুন, কারণ এতেই রয়েছে দৈনন্দিন জীবনে আমরা যেসকল সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি, সেগুলোর পূর্ণাঙ্গ সমাধান। ধৈর্য্য, ক্ষমা ও বিনয়ের মতো মহৎ গুণগুলো নিজের চরিত্রে ধারণ করুন, এগুলোই হলো একটি শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল ও সহানুভূতিশীল সমাজ বিনির্মানের মূল অবকাঠামো।
চলুন আমরা পবিত্র কোরআনের একটি বানীর দিকে আলোকপাত করি- " হে মানবজাতি! আমরা তোমাদেরকে একজন নারী ও একজন পুরুষ থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জনগোষ্ঠী ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা একে অপরের সম্পর্কে জানতে পারো। নিশ্চয়ই, আল্লাহর দৃষ্টিতে তোমাদের মধ্যে সেই ব্যাক্তিই শ্রেষ্ঠ যিনি সৎকর্মশীল ও ন্যায়পরায়ণ।( পবিত্র কোরআন ৪৯:১৩)।
হযরত রাসুল(সা.) এর একটি হাদিসের বর্ননায় পাওয়া যায়- " তোমাদের মধ্যে তারাই শ্রেষ্ঠ যারা অপরের প্রতি সদয় ও সহানুভূতিশীল।"
মোহাম্মদী ইসলামের আন্তর্জাতিকীকরণের প্রক্রিয়ায়, আসুন, আমরা শুধু ধর্মের প্রচার না করে সকল ধর্মের ও সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা ও সহনশীলতার চর্চা করি। আসুন, আমরা শান্তিপূর্ণ সহবস্থানের মাধ্যমে পারষ্পরিক মেলবন্ধনের জায়গাগুলো খুঁজে বের করি এবং সকল সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির সেতুবন্ধন তৈরী করি। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে এরশাদ রয়েছে, - " তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিত, যারা (লোককে) কল্যাণের দিকে আহবান করবে এবং সৎকার্যের নির্দেশ দেবে ও অসৎ কার্য থেকে নিষেধ করবে। আর এ সকল লোকই হবে সফলকাম।" (সুরা: আল ইমরান,আয়াত: ১০৪)।
আমাদের সবসময় মনে রাখা উচিত, মোহাম্মাদী ইসলামের অনুসারী হিসেবে আমাদের পথচলা কখনোই কন্টক মুক্ত নয়। এই প্রতিকূল যাত্রায় আমাদেরকে সমালোচনা, বৈষম্য ও চরম বৈরিতার মোকাবেলা করতে হতে পারে। এরপরেও বলতে হয় , প্রতিকূলতার সম্মুখীন হলেই আমাদের ঈমান আরো সুদৃঢ় হয় এবং উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর আলো ছড়াতে থাকে। আসুন, আমরা হযরত রাসুল(সা.) এর সুমহান দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে সকল প্রতিকূলতা ধৈর্য্য ও সাহসের সাথে মোকাবিলা করি। মনে রাখবেন, আপনাদের প্রত্যেকের উপর আমার অবিচল আস্থা রয়েছে। আসুন, আমরা সকলে মিলে মোহাম্মদী ইসলামের পতাকাকে তুলে ধরি এবং এমন এক বিশ্বকে সামনে নিয়ে আসি, যেখানে থাকবে শান্তি, সহমর্মিতা ও ন্যায়বিচার সর্বদা বিরাজমান।
পরিশেষে, আপনাদেরকে একটি কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, প্রতিটি পরিবর্তন ই নিজের ভিতর থেকে শুরু হয়। যেহেতু আমরা সকলে এই বিশ্বকে প্রগতির দিকে এগিয়ে নিতে চাই, তাই আমাদেরকে প্রথমেই নিজেদের আত্মশুদ্ধি ও আত্মোন্নয়নে কাজ করতে হবে। আমাদের সকলের কর্ম ও চরিত্রের মধ্য দিয়ে যেন আমাদের বিশ্বাসের সৌন্দর্য প্রতিফলিত হয়, যা অন্যদেরকেও সত্য ও ন্যায়ের পথ অনুসরণে উৎসাহিত করবে।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সবাইকে সত্য ও সুন্দরের পথে পরিচালিত করে, ঐক্য ও সাম্যের ভিত্তিতে একটি সুন্দর আগামীর বিনির্মানে তাওফিক দান করুন। তিনি যেন আমাদেরকে প্রজ্ঞা ও সাহস দিয়ে মোহাম্মদী ইসলামের প্রকৃত প্রতিনিধি হতে এবং বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে এর আলো ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করুন।
'আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহু'।
জাযাকাল্লাহ খাইরান।